শিক্ষাইসলামিক কর্ণার

যাকাত স্থানান্তরকরণের বিধান

Story Highlights
  • Knowledge is power
  • The Future Of Possible
  • Hibs and Ross County fans on final
  • Tip of the day: That man again
  • Hibs and Ross County fans on final
  • Spieth in danger of missing cut

যাকাত স্থানান্তরকরণ

যাকাতলব্ধ সম্পদ ব্যয় ও বিনিয়োগ বা বণ্টন এবং যাকাত স্থানান্তরকরণ এর ক্ষেত্রে ইসলামের একটা বিশেষ বিজ্ঞানসম্মত ও ন্যায়বাদী নীতি রয়েছে। আমাদের এ যুগে প্রতিষ্ঠানগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা যতই পরিবর্তিত হোক না- কেন, তার সাথে সে নীতির পূর্ণ সংগতি বিদ্যমান। অধিকন্তু লোকদের ধারণা-কল্পনায় ভবিষ্যতে যত রকমের প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাই গড়ে উঠুক এবং যতই নতুন নতুন আইন-বিধান তৈরী হোক; ইসলামের এই নীতির সাথেও উপযুক্ততা ও সংগতি রক্ষা করে অতি আধুনিক ও নতুন হয়ে কাজ করতে সক্ষম হবে।
আরব জাহিলিয়াত ও ইউরোপ ইত্যাদির অন্ধকার জাহিলিয়াতের যুগেও লোকেরা ভালভাবে জানতো, কৃষক-চাষী, শিল্প মালিক, পোশকধারী, ব্যবসায়ী প্রতৃতির নিকট থেকে কিভাবে কর- এর নামে অর্থ লুট করে নেয়া হত। অথচ তখন এ লোকেরা কত না কঠোর শ্রম করে মাথার ঘাম ফেলে ও রাত জেগে জীবিকা উপার্জন করত! লোকদের ঘাম রক্ত ও অশ্রুনিষিক্ত এই অর্থ চলে যেত স¤্রাট, রাজা-বাদশাহ, স্থানীয় শাসক-প্রশাসক ইত্যাদির হাতে এবং তা তাদের বিলাস-ব্যসনে, রাজধানী ও রাজপ্রাসাদের চাকচিক্য বিধানে অকাতরে ব্যয় করা হত। তাদের সিংহাসন খচিত করা হত তাদের বাহাদুরী ও শান-শওকত বৃদ্ধির জন্যে। তাতে চারপাশের পাহারাদার, সাহায্যকারী ও অনুগমনকারীদের অপেক্ষা নিজেদের অধিকতর প্রাচুর্য উন্নত করে তুলবার ব্যবস্থা ছিল। তারপরও কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা রাজধানী সম্প্রসারণ, সৌন্দর্য বিধান ও তার অধিবাসীদের সুখ- স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধিকল্পে ব্যয়িত হত। তারপরও কিছু বেঁচে গেলে সর্বোচ্চ কর্তার নিকটবর্তী ব্যক্তি ও শহরের বিশিষ্টদের মধ্যে বণ্টন করা হত। আর তারা সকলেই সেই দূরবর্তী অনগ্রসর ও দুর্দশাগ্রস্ত কষ্টে নিমজ্জিত গন্ডগ্রামের লোকদের প্রতি চরম উপেক্ষা ও অনীহা পোষণ করত অথচ সে সব ‘কর’ এই স্থানসমূহ থেকেই নেয়া হয়েছে, সংগ্রহ করা হয়েছে এ সব বিলাস দ্রব্য।[গ্রন্থকারে (আরবী************)থেকে উদ্ধৃতি।] কিন্তু দুনিয়ায় যখন ইসলামের আগমন হল এবং মুসলিম ধনী ব্যক্তিদের জন্যে নিয়মিতভাবে যাকাত দেবার বিধান জারি করল, সেই সাথে তা আদায় করার জন্যে দায়িত্বশীল নিযুক্ত করা হল, তখন এ নীতিও চালু ও কার্যকর করা হল যে, এ যাকাত যেখান থেকে পাওয়া যাবে- আদায় ও সংগ্রহ করা হবে, সেখানেই তা বণ্টনও করা হবে। এ নীতিটি গবাদি পশু, কৃষি ফসল ও ফল-ফাঁকড়ার যাকাতের ক্ষেত্রে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত ও পালিত। কেননা যাকাত বণ্টন করতে হবে যেখানেই তা পাওয়া যাবে। সেই সাথে এ ব্যাপারেও কোন দ্বিমত নেই যে, রোযার ফিতরা-ফিতরার যাকাত সেখানেই বণ্টন করা হবে, যেখানে বসবাস করে সেই ব্যক্তি যার উপর তা ওয়াজিব হয়েছে।
তবে নগদ সম্পদের যাকাত পর্যায়ে ফিকাহ্বিদদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থাক্য রয়েছে। এ যাকাত কি সেখানেই বণ্টন করা হবে যেখানে তা পাওয়া গেছে অথবা যেখানে সম্পদের মালিক বসবাস করে? [দেখুনঃ (আরবী************)] প্রখ্যাত কথা-যা অধিকাংশ ফিকাহ্বিদের মত- হচ্ছে, এ পর্যায়ে মালের অবস্থান ধরতে হবে, মালিতের নয়।
এই নীতির দলিল হচ্ছে রাসূলে করীম (স) ও খুলাফায়ে রাশেদুনের সুন্নত। নবী করীম (স) যখনই এবং যেখানেই যাকাত আদায়কারী লোক প্রেরণ করেছেন-প্রশাসক নিয়োগ করেছেন কোন অঞ্চলে, শহরে বা রাজ্যে তাদের স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন সেখানকার ধনী লোকদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করে এবং সেখানকারই ফকীর-মিসকীনের মধ্যে তা বণ্টন করে দেয়।
হযরত মুয়ায সংক্রান্ত হাদীস অনেকবার উদ্ধৃত করা হয়েছে। সে হাদীসটি যে সহীহ, সে ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই- সর্বসম্মত। তাতে বলা হয়েছে, নবী করীম (স ) তাঁকে ইয়েমেন পাঠিয়েছিলেন এবং তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেখানকার ধনী লোকদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করে সেখানকারই গরীব লোকদের মধ্যে তা বণ্টন করে দিতে।
হযরত মুয়ায রাসূলে করীম (স)-এর এ আদেশকে পুরোপরি ও যথাযথভাবে কার্যকর করেছেন। ইয়েমেনবাসীদের যাকাত সেখানকারই তা পাওয়ার যোগ্য লোকদের মধ্যেই বণ্টন করে দিয়েছিলেন। বরং প্রতিট রাজ্যের বা অঞ্চলের যাকাত বিশেষভাবে সেখানকার অভাবগ্রস্ত লোকদের মধ্যেই বণ্টন করেছিলেন। আর তাদের জন্যে একটি সনদও লিখে দিয়েছিলেন। তাতে ছিলঃ যে‘ জেলায়’ [মূল্য (আরবী**********) শব্দ রয়েছে। ইবনুল আসীর (আরবী**********) গ্রন্থে বলেছেনঃ ইয়ামনে ‘মেখ’ ‘লাফ’ তেমন যেমন ইরাকে রুস্তাক (আরবী********) অর্থাৎ তা একটি শাসন এলাকা যেমন প্রদেশ বা জিলা।] যারা লোকজন জমি ও সম্পদ সেখান থেকে সে অন্যত্র চলে গেলেও তার যাকাত ও ওশর তার লোকজনের সেই জেলাতেই (বণ্টিত) হবে’। [আবূ হুযায়ফা থেকে তায়ূস এই বর্ণনাটি করেছেন সহীহ সনদে। সায়ীদ ইবনে মনসূর এবং তাঁর ন্যায় আমরাও তা উদ্ধৃত করেছি, যেমন (আরবী*************) তে উদ্ধৃত হয়েছে।] আবূ হুযায়ফা বলেছেনঃ আমাদের কাছে রাসূল (স)- এর প্রেরিত যাকাত আদায়কারী উপস্থিত হল। সে আমাদের মধ্যকার ধনী লোকদের কাছ থেকে যাকাত আদয় করে আমাদেরই গরীব লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দিল। তখন আমি ছিলাম এক ইয়াতীম ক্রীতদাস। আমাকে সে যাকাত সম্পদ থেকে একটা উট দিয়েছিল। [ঘটনাটি তিরমিযী উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি ‘হাসান’ উক্ত সূত্র] সহীহ্ গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে, একজন আরব বেদুঈন রাসূলে করীম (স)- কে অনেক প্রশ্ন করেছিলেন। তন্মধ্যে একটি এইঃ আল্লাহ্ আপনাকে রাসূল বানিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ্ কি আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আপনি আমাদের ধনী লোকদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করবেন এবং তা বণ্টন করবেন আমাদেরই দরিদ্র লোকদের মধ্যে? বললেনঃ হ্যাঁ।
আবূ উবাইদ উমর (রা) থেকে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, তিনি তাঁর উপদেশনামায় বলেছেনঃ আমি আমার পরবর্তী খলীফাকে অসিয়ত করছি এ বিষয়ে। আরও অসিয়ত করছি এই……বিষয়ে এবং অসিয়ত করছি আরব বেদুঈনদের কল্যাণ করার জন্যে। কেননা তারাই আসল আরব ও ইসলামের সারবস্তু এবং এভাবে করতে হবে যে, তাদের মালদার লোকদের কাছ থেকে তাদের ধন-মালের যাকাত গ্রহণ করতে হবে এবং তা তাদেরই দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। [আরবী*************] হযরত উমর (রা)-এর জীবনকালীন কাজের ধারাও তা-ই ছিল। তিনি যেখান থেকে যাকাত সংগ্রহ করতেন, সেখানেই বণ্টন করাতেন। আর সরকার নিয়েজিত যাকাত কর্মচারীরা মদীনায় ফিরে আসতো রিক্ত হস্তে, সঙ্গে নিয়ে আসত শুধু সে সব কাপড়-চোপড়, যা পরিধান করে তারা গিয়েছিল নিজ নিজ ঘর থেকে অথবা সেই লাঠি, যার ওপর তারা ভর করে চলাফেরা করত আগে থেকেই।
এ পর্যয়ে সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত উমর মুয়াযকে বনু কিলাব গোত্রের বা বনু সায়াদ ইবনে যুবিয়ান গোত্রের যাকাত সংগ্রহকারীরূপে পঠিয়েছিলেন। সেখানকার যাকাত বণ্টন করে দেয়ার পর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। পরে তিনি সেই পোশাকেই রাজধানীতে ফিরে আসেন, যা তার পরিধানে ছিল যাওয়ার সময়।[আরবী*************] ইয়ালা ইবনে উমাইয়্যাতার সঙ্গী ও হযরত উমর যাদেরকে যাকাত আদয়ে কর্মচারী নিযুক্ত করেছিলেন তাদের মধ্যে থেকে সায়াদ বলেছেনঃ
আমরা যাকাত আদায়ের জন্য বের হয়ে যেতাম। পরে আমরা ফিরে আসতাম শুধু আমাদের চাবুকগুলো হাতে নিয়ে।[আরবী*************] হযরত উমর (রা)- কে সওয়াল করা হয়েছিলঃ আরব বেদুঈনদের যাকাত কি জিনিস থেকে নেয়া হবে? তা নিয়ে আমরা কি বা কেমন করব? জবাবে হযরত উমর (রা) বলেছিলেনঃ আল্লাহ্র শপথ, আমি তাদের ওপর সহজভাবে যাকাত ফিরিয়ে দেব, পতক্ষণ তাদের এক- এক জনের ভাগে একশ ‘উষ্ট্রী বা একশ’ উট পড়ে।[আরবী************] পরিপন্থী- ক্ষতিকর, যে জন্যে যাকাত ফরয করা হয়েছে। এ কারণে আল-মুগনী গ্রন্থে বলা হয়েছেঃ যেহেতু যাকাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে তদ্দারা গরীব-মিসকীন লোকদের ধনী বা সচ্ছল বানানো। অতএব তাকে স্থানন্তরিত করাকে যদি আমরা মুবাহ করে দিই, তাহলে সেই স্থানের ফকী- মিসকীনদের অভাবগ্রস্ত অবস্থায় রেখে দেওয়ার পরিস্থিতি দেখা দেবে। [আরবী************] রাসূলে করীম (স) ও তাঁর খুলাফায়ে রাশেদুন উপস্থপিত নীতি ও পদ্ধতির ওপরই স্থিতিশীল রয়েছেন সুবিচারক ও ন্যায়বাদী প্রশাসকবৃন্দ। সাহাবী ও তাবেয়ীনের মধ্যে ষাঁরা ফতোয়ার ইমাম ছিলেন, তাঁরাও তা থেকে এক বিন্দু বিচ্যুত হন নি।
ইমরান ইবনে হুচাইন (র) জিয়াদ ইবনে আবীহ্ কিংবা বনু উমাইয়্যা বংশোর কোন প্রশাসকের পক্ষ থেকে যাকাতের কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি যখন ফিরে এলেন তাঁকে সে জিজ্ঞাসা করলঃ মাল-মত্র কোথায়?
তিনি বললেনঃ আমাকে কি মাল আনতে পাঠিয়েছিলেন? মাল তো সেখান থেকেই আমরা পেয়িছি, যেখান থেকে আমরা রাসূলে করীম (স)-এর যুগে পেতাম এবং তেমনিভাবেই তা রেখে এসেছি যেমন করে পূর্বে রেখে আসতাম।[আবূ দাউদ ও ইবনে মাজাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। দেখুনঃ (আরবী*************] মুহাম্মাদ ইবনে ইউসূফ সাকাফী তায়ূসকে- যিনি ইয়েমেনের ফিকাহবিদ বলে খ্যাত ছিলেন- মিখ্লাফ এলাকার যাকাতের কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি তথায় ধনীদের কাছে থেকে যাকাত গ্রহণ করতেন এবং তা ফকীরদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন। যখন বণ্টনের কাজ শেষ করতেন, তখন তাকে বলা হলঃ তোমার হিসেব পেশ কর। বললেনঃ আমার কোন হিসেব নেই। আমি তো ধনীর কাছ থেকে নিতাম ও মিসকীনকে দিয়ে দিতাম।[আরবী**************] ফাসকাদ সাবখী থেকে বর্ণিত আছেঃ আমি আমার মালের যাকাত বহন করে নিয়ে মক্কায় বিতরণ করতে চেয়েছিলাম। পথে সায়ীদ ইবনে জুবাইরের সাথে সাক্ষাত করলাম। তিনি বললেনঃ ওসব ফিরিয়ে নিয়ে যাও এবং তোমার নিজের শহরেই তা বিতরণ করে দাও।[আরবী*************] আবূ উবাইদ বলেছেনঃ এ কালের আলিমগণ এসব উক্তি ও দলিলের ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত। প্রত্যেকটি শহর বা এলাকার জনগণ- মরুবাসীদের ক্ষেত্রে প্রত্যেক পানি কেন্দ্রের লোকেরা সেখানকার যাকাত পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের তুলনায় বেশী।
অধিকারসম্পন্ন- যতক্ষণ পর্যন্ত তথায় অভাবগ্রস্ত লোক থাকবে- একজন বা বহু তাতে যদি সমস্ত যাকাতই নিঃশেষিত হয়ে যায়- এমন কি যাকাতের কর্মচারীকে রিক্ত হস্তে ফিরে আসতে হয়, তবুও।
একটু পূর্বে যা উল্লেখ করা হয়েছে- হযরত মুয়ায সংক্রান্ত কথা যে, তিনি যে পোশাক পরে গিয়েছিলেন, তা পরা অবস্থায়ই ফিরে এসেছিলেন; সায়ীদ সংক্রন্ত কথা- তিনি বলেছেলেনঃ আমরা যাকাত সংগ্রহে বের হয়ে যেতাম, পরে আমাদের মুয়ায ইয়েমেনবাসীদের উদ্ধৃত যাকাত হযরত উমরের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তা ফেরত পাঠিয়েছিলেন- আবূ উবাইদ এ সবকেই দলিলরূপে উপস্থাপন করেছেন। পরে আবূ উবাইদ বলেছেনঃ এ সব হাদীস প্রমাণ করছে যে, প্রত্যেক স্থানের জনগণ সে স্থানের যাকাত পাওয়ার সর্তবিধ অধিকারী- যতক্ষণ না তার সম্পূর্ণরূপে যাকাতের ওপর নির্ভরতা- মুখাপেক্ষিতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হচ্ছে। আমরা যে অন্যদের তুলনায় কেবল সে স্থানের লোকদের অধিকারের কথা বলছি, তার কারণ হচ্ছে, হাদীসে সুন্নাতের প্রতিবেশীর মর্যাদা ও অধিকারের ওপর খুব বেশী গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ধনীর পাশে দারিদ্রদের ঘর হওয়াটা তাদেরকে এই অধিকার এনে দিয়েছে। [আরবী***************] হ্যাঁ, যাকাতদাতা যদি ভুলে যায় বা না জানে এবং সে যাকাত এক স্থান থেকে অন্য এক স্থনে বহন করে নিয়ে যায়, অথচ সেখানকার সেই প্রথম স্থানের লোক তার মুখাপেক্ষী, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান তা তাদের কাছে ফেরত পাঠাবে- যেমন হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজ করেছিলেন এবং যেমন সায়ীদ ইবনে জুবাইর এ মতের ওপর ফতোয়া দিয়েছেন। [আরবী*************] অবশ্য ইবরাহীম নখ্য়ী ও হাসানুল বখরী যাকাতদাতার এ অধিকার আছে বলে মনে করেন যে, সে তার যাকাত পাওয়ার নিকটবর্তী অধিকার কার তা অগ্রাধিকার দিয়ে ঠিক করবে।
আবূ উবাইদ বলেছেন, ব্যক্তির বিশেষত্ব ও তার মালের বিবেচনায় তা জায়েয হবে। কিন্তু জনসাধারণের যাকাত সম্পদ- যা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সংগ্রহ করে ও বণ্টনের দায়িত্ব পালন করে, সে ক্ষেত্রে এ কাজ জায়েয নয়।
উপরিউক্ত ফকীহ্ দুজনের মত বহন করে আবদুল আলীয়া বর্ণিত হাদীস। তাতে বলা হয়েছে, তিনি তাঁর যাকাত মদীনায় বহন করে নিয়ে যেতেন।
আবূ উবাইদ বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, তিনি তা তাঁর নিকটাত্মীয় ও মুক্ত করা গোলামদের মধ্যেই বিশেষভাবে বণ্টন করেছেন, আর কাউকে দেন নি। [আরবী***********] কোন স্থানের জনগণ দারিদ্র্যমুক্ত হলে সেখানকার যাকাত অন্যত্র নিয়ে যাওয়া জায়েয
মূলত ও সর্ববাদীসম্মত মত যেমন এই যে, যাকাত যে স্থানের ধন-মালের ওপর ফরয হয়েছে তদুযায়ী আদায় হয়েছে, সেই স্থানের দারিদ্রদের মধেই তা বণ্টন করতে হবে; অনরূপভাবে এ কথাও সর্বসম্মত যে, সে স্থানের জনগণ যখন সে যাকাতের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে মুক্ত হবে, তখন তা অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সর্বতোভাবে জায়েয। সে নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি হয় এ কারণে হতে পারে যে, তা পাওয়ার যোগ্য বিভিন্ন প্রকারের লোক তথায় নেই অথবা এজন্যে যে, তাদের সংখ্যা কম আর যাকাতের মালের পরিমাণ বিপুল। তখন হয় রাষ্ট্রপ্রাধানের কাছে অবশিষ্ট পরিমাণ যকাত ফিরিয়ে দিতে হবে, যেন সে প্রয়োজন মত ব্যয় করতে পারে অথবা সে স্থানের আবূ উবাইদ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা) রাসূল (স) কর্তৃক ইয়েমেনে প্রেরিত হওয়ার পর তাঁর ও তাঁর পরে হযরত আবূ বকর (রা)-এর ইন্তেকালের পরবর্তী সময় পর্যন্ত ‘জামাদ’ নামাক স্থানে অবস্থান করছিলেন। পরে হযরত উমর (রা)- এর সময় তিনি ফিরে আসেন। তখন তিনিও তাঁকে পূর্বের সেই দায়িত্বে পুনর্বহাল করেন। তখন হযরত মুয়ায তাঁর কাছে লোকদের কাছ থেকে পাওয়া এক-তৃতীয়ংশ যাকাত পাঠিয়েছিলেন। হযরত উমত (রা) তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন এবং বলে পাঠালেন, ‘আমি তো তোমাকে কর আদয়কারী করে পাঠাইনি। জিযিয়া গ্রহণকারীরূপেও নয়। পাঠিয়েছি এ উদ্দেশ্যে যে, তুমি ধনী লোকদের কাছ থেকে (যাকাত) নেবে ও তা তাদের মধ্যকার দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করবে। হযরত মুয়ায (রা) জানালেনঃ আমি আপনার কাছে এমন অবস্থায় কিছুই পাঠাইনি যে, তা গ্রহণ করার এখানে কজন লোকও পাওয়া গিয়েছিল (অর্থাৎ যা পাঠিয়েছি তা গ্রহণ করার এখানে কেউ নেই।) পরবর্তী বছর তিনি খলীফার কাছে অর্ধ-পরিমাণ যাকাত পাঠিয়ে দিলেন। সেবারও তিনি তা ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। তৃতীয় বছরে তিনি যাকাত বাবদ প্রাপ্ত সমস্ত সম্পদ খলীফার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তখনও হযরত উমর পূর্বের ন্যায় ফেরত পাঠালেন। তখন হযরত মুয়ায বললেনঃ আমার কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণ করার একজন লোকও এখানে পাই নি। [(আরবী ***********) এবং আমার গ্রন্থ (আরবী***********) গন্থের শেষের টীকা দেখুন।] প্রথমবার হযরত উমর (রা) হযরত মুয়ায কর্তৃক প্রেরিত যাকাত সম্পদ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন- তারপরও বারবার তাই করেছিলেন- এ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, যাকাতের ব্যাপারে মৌল নীতি হচ্ছে তা প্রাপ্তির স্থানেই বণ্টন করতে হবে। পরে শেষবার হযরত উমর (রা) হযরত মুয়াযের কাজকে বহাল রেখেছিলেন তা পাওয়ার যোগ্য লোক পাওয়া যাবে না।
পূর্ণ অভাবমুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও স্থানান্তরিতকরণে বিভিন্ন মত
যাকাত সংগৃহীত হওয়ার স্থানের লোকদের অভাবমুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও তা অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ফিকাহ্বিদগণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে কোন কোন মাযহাব খুব বেশী কঠোরতা অবলম্বন করেছেন। এ মতের লোকেরা কোনক্রমেই অন্যত্র নিয়ে যাওয়াকে সমর্থন করতে প্রস্তুত নন। এমনকি ততটা দূরত্বের নিয়ে যাওয়া জায়েয মনেস করেন না যতটা দূরত্বে গেলে নাময ‘কছর’ করা যায়, যত বড় প্রয়োজনই হোক না কেন ।
শাফেয়ী মতের লোকদের বক্তব্য হল, যাকাত এক স্থান থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া জায়েয নয়, নেখান থেকে তা পাওয়া গেছে সেখানেই তা ব্যয় ও বণ্টন করা ওয়াজবি। তবে সে স্থানে তা পাওয়ার যোগ্য লোক যদি আদৌ না থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। হাম্বলী মতের লোকদেরও এ মত। পাওয়ার যোগ্য লোক থাকা সত্ত্বেও যাকাত স্থানান্তরিত করা হলে গুনাহ্ হবে, যদিও যাকাত আদায় হবে। কেননা যাকাতের তো তা পাওয়ার যোগ্য লোককে দিয়েছে তাই সে দায়িত্বমুক্ত হবে, যেমন ঋণের ক্ষেত্রে হয়। অন্যবা বলেছেন, যাকাত আদায়ই হবে না। কেননা অকাট্য দলিলের বিরোধিতা করা হয়েছে। [ (আরবী ***********) মুল্লা আলী আল-কারী মিশকাত-এর শরাহ্ গ্রন্থে তাবেযী থেকে উদ্ধৃত করেছেন, ফিকাহ্বিদগণ এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত যে, যাকাত সম্পদ স্থানান্তরিত করা হলেও আদায় করা হলে ফরয পালন হবে। তবে উমর ইবনে আবদুল আবদুল আজীজ ভিন্ন মত পোষণ করেন। কেননা তাঁর সময়ে খোরাসান থেকে যাকাত সম্পদ ‘শাম’ চলে যাওয়ার পর তিনি তা তার স্থানে ফেরত দিয়েছিলেন। আ-কারী লিখেছেন,এতে এই প্রমাণ হয় যে, তাঁর এ কাজটা ইজমা’র বিরোধিতা করা বোঝায় না। বরং তিনি তা করেছেন পূর্ণ মাত্রায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এবং লোভ প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে। দেখুনঃ আরবী**********] আর হানাফী মাযহাবের লোকদের মত হচ্ছে যাকাত স্থানান্তর করা মাক্রুহ বটে; তবে তা যদি নিকটাত্মীয় অভাবগ্রস্ত লোকদেগর মধ্যে বণ্টনের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়, তাহলে মাকরুহ্ হবে না। কেননা তাতে ‘ছেলায়ে রেহমী’ রক্ষার দিকটি প্রবল অথবা যদি এমন ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর কাছে তা নিয়ে যাওয়া হয় যারা স্থনীয় লোকদের তুলনায় অধিক অভাবগ্রস্ত; কিন্তু তা স্থানান্তরিতকরণ মুসলিম জনগণের পক্ষে অধিক কল্যাণকর বিবেচিত হয় অথবা তা ‘দারুল হরব’ থেকে দারুল- ইসলামের মুসলিম ফকীর মিসকীন দারুল হরবের ফকীর- মিসকীনের তুলনায় সাহায্য পাওয়ার উত্তম ও বেশী অধিকারসম্পন্ন। কোন আলিম বা তালেবে ইলমকে দেয়ার জন্যে নেয়া হয়, তাতেও আপত্তি নেই। কেননা তাতে তাকে সাহায্য করা হবে ও তার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা হবে অথবা যদি অধিক আল্লাহ্ভীরু বা মুসলিম জনগণের পক্ষে অধিক উপকারী ও কল্যাণকামী ব্যক্তির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়,- এও হতে পারে যে, যাকাত বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই তা আদয় করা হয়েছে- এসব অবস্থায় যাকাত স্থানান্তরিত করা মাকরুহ্ নয়। [আরবী*************] মালিকী মতের লোকদের অভিমত হচ্ছে, যাকাত ফরয হওয়া স্থানে বা তার নিকটবর্তী স্থানে তা বণ্টন করা ওয়াজিব। এই নিকটবর্তী স্থান বলতে নামায ‘কসর’ করা যায় এমন দূরুত্বের কম বোঝায়, কেননা তাও যাকাত ফরয হওয়ার স্থানের মধ্যে গণ্য।
আর যাকাত ফরয হওয়া বা তার নিকটস্থ স্থানে তা পাওয়ার যোগ্য লোক যদি না পাওয়া যায়, তাহলে তা এমন স্থানে নিয়ে যাওয়া ওয়াজিব, যেখানে তা পাওয়ার যোগ্য লোক রয়েছে। তা ‘নামায কসর’- এর দূরত্বে হলেও কোন দোষ নেই। যাকাত ফরয হওয়ার স্থানে বা তার নিকটবর্তী স্থানে কোন যাকাত পাওয়ার যোগ্য লোক থাকে, তাহলে তা সেই স্থানে বণ্টন করা অবশ্যম্ভাবী হবে। তখন তা ‘নামায-কসর,- এর দূরত্বে নিয়ে যাওয়ার জায়েয হবে না। তবে তা যাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে তারা যদি তুলনামূলকভাবে অধিক অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্রও হয়, তাহলে বেশী পরিমাণ তাদের জন্যে নিয়ে যাওয়া মুস্তাহাব হবে। আর যদি সবটাই সেখানে নিয়ে যায়, কিংবা তার সবটা ওয়াজিব হওয়া স্থানেই বণ্টন করে, তাহলেও চলবে।
কিন্তু তা যদি অধিক দুঃস্থ ও অধিক অভাবগ্রস্ত নয় এমন লোকদের জন্যে স্তানান্তরিত করা হয়, তাহলে তার দুটি অবস্থাঃ
প্রথম, তুলনামূলকভাবে ওয়াজিব হওয়া স্থানের লোকদের সমান অভাবগ্রস্ত লোকদের জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহেল তা জায়েয হবে না। যাকাত অবশ্য আদায় হয়ে যাবে, তা পুনরায় দিতে হবে না।
আর দ্বিতীয়, অপেক্ষাকৃত কম অভাবগ্রস্ত লোকদের জন্যে নিয়ে যাওয়া হলে তাতে দুটি কথাঃ প্রথম কথা, খলীল তাঁর (আরবী***********) –এ বলেছেন, তাতে যাকাত আদায় হবে না। আর দ্বিতীয় কথা, ইবনে রুশদ ও আলকাফী বলেছেন, যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কেননা তা তার জন্যে নির্দিষ্ট ব্যয় ক্ষেত্রেই ব্যয় করা হয়েছে। [আরবী*************] জায়দীয়া ফিকাহ্র মতে যাকাত আদয়ের স্থানে তার গরীব লোক থাকা সত্ত্বেও তাদের ছাড়া অন্যদের মধ্যে তা বণ্টন করা মাক্রুহ্। বরং সেখানে দারিদ্র লোক থাকলে তাদের মধ্যে বণ্টন করাই উত্তম। মালের মালিক ও রাষ্ট্রপ্রধান সেখানেই থাকুক, কি অন্যত্র তাতে কোন পার্থাক্য হবে না তাঁরা বলেছেনঃ আমাদের মতে মাক্রুহ্ বলতে বোঝায় মুস্তাহাবের বিপরীতটা। সে স্থানের গরীবদের ছাড়া অন্যত্র যাকাত ব্যয় করা হলে যাকাত আদায় হবে বটে; তবে মাকরুহ্ হবে। যদি না তা উত্তম ও অধিক ভালো কোন উদ্দেশ্যের জন্য স্থানান্তরিত কার হয়ে থাকে। সে ভালো উদ্দেশ্যে হতে পারে নিকটাত্মীয় কোন ব্যক্তি বা দ্বীনী শিক্ষার্থী যদি যাকাত পাওয়ার যোগ্য হয় তবে তাকে দেয়া। খুব বেশী ঠেকায় পড়া কোন লোককে দেয়। এরূপ অবস্থায় যাকাত স্থানান্তরিত করা হলে ত মাক্রুহ্ তো হবেই না বরং তাই উত্তম কাজ হবে। [আরবী*********** ] আবাজীয় মতের লোকদের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিটি স্থানের দরিদ্রদের মধ্যে যেখান থেকে যাকাত পাওয়া গেছে, সেখানে এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক পরিমাণ বিতরণ করবেন এবং অবশিষ্ট পরিমাণ ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেৃশ্যে নিয়োগ করবেন?…… এ প্রশ্নের জাবাবে দুটি কথাঃ
তাঁরা বলেছেন, যদি সম্পূর্ণ পরিমাণই ব্যয় করার প্রয়োজন হয়, তবে তাই নিয়ে নেবে এবং তাদের দেবে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী। যদি প্রয়োজন না হয়, তাহলে সবটাই বণ্টন করে দেবে। আর একটি স্থনের লোকের যখন যথেষ্ট পরিমণ পেয়ে যাবে, তখন তার নিকটবর্তী আর একটি স্থানকে গ্রহণ করতে হবে। [আরবী**************] রাষ্ট্রপ্রধানের ইজতিহাদে স্থানান্তর জায়েয
আমার যা মনে হয়- উপরে যেসব হাদীস, সাহাবীদের উক্তি এবং তাবেয়ীদের মন্তব্য- বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে তার ভিত্তিতে এ বিশ্বাস জন্মে যে, যাকাতের মূল কথা হচ্ছে, যেখান থেকে তা সংগৃহীত হবে সেখানেই তা বণ্টন করে দিতে হবে প্রতিবেশীর অধিকারের মর্যদা প্রতিষ্ঠা এবং দারিদ্র্য বিরোধী যুদ্ধ ও প্রতিঘাত সংঘঠিত করার লক্ষ্যে। সেই সাথে প্রত্যেক অঞ্চলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর করে তোলার উদ্দেশ্যে ও সেখানকার স্থানীয় অভ্যন্তরীণ সমস্যাসমূহের মুকাবিলা করার জন্যে। আরও বিশেষ করে এজন্যে যে, স্থানীয় ফকীর-মিসকীনরা তো তাদের দৃষ্টি ও মন এসব ধন-মালের ওপর নিবদ্ধ করে রেখেছে এবং তার যাকাত পাওয়ার জন্যে উদগ্রীব হয়ে রয়েছে। ফলে অন্যদের তুলনায় তাদের অধিকার অগ্রাধিকার পাওয়ার অধিকারী হয়েছে।
এসব সত্ত্বেও এ মৌলনীতির বিপরীত কোন কাজ করার পথে প্রতিবন্ধক কিছু আছে বলে মনে করার কারণ দেখছি না। যদি ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রপ্রধান উপদেষ্টা পরিষদের পরামর্শক্রমে তা করা মুসলিম জনগণের পক্ষে কল্যাণকর এবং ইসলামের পক্ষে মংগলজনক মনে করে, তাহলে তা সে অনায়াসেই করতে পারে।
এ পর্যয়ে ইমাম মালিক যা বলেছেন, তা আমার খুব মনঃপূত হয়েছে। তা হচ্ছেঃ যাকাত স্থানান্তরকরণ জায়েয নয়। তবে কোন স্থানের লোকদের জন্যে তা অপরহার্যভাবে প্রয়োজনীয় বোধ হলে রাষ্ট্রপ্রধান স্বীয় ইজাতিহাদ ও সবিবেচনার ভিত্তিতে তা করতে পারেন।[আরবী***********] তাঁর সহকর্মীদের মধ্য থেকে ইবনুল কাসেম বলেছেনঃ যাকাতের কিছু অংশ প্রয়োজনের কারণে স্থানান্তরিত করা আমি সঠিক বলে মনে করি।[] মসনূন থেকে বর্ণিত- তিনি বলেছেন, “রাষ্ট্রপ্রধান যদি জানতে পারেন যে, কোন কোন স্থানে অভাব ও প্রয়োজন খুব তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান যাকাতের একটা অংশ অন্যদের জন্যে স্থানান্তরিত করতে পারেন- তা তাঁর জন্যে জায়েয। কেননা অভাব যখন দেখা দেয়, তখন তাকে অভাবমুক্ত এলাকার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া- একান্তই কর্তব্য। হাদীস বলছেঃ (আরবী************) ‘একজন মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তাকে বিপদের মুখে ছেড়ে দিতে পারে না, তার ওপর সে জুলুমও করতে পারে না। [আরবী**********] (আরবী**********) গ্রন্থে ইমাম মালিক থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) মিশরে অবস্থানরত হযরত আমর ইবনুল আ’স (রা)- কে মহাদুর্ভিক্ষের বছর লিখে পাঠিয়েছিলেনঃ [(আরবী************) হাকেম তাঁর (আরবী**********) গ্রন্থে এ উক্তিটি (আরবী**********) এর তুলনায় আরও দীর্ঘ আকারে উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন, এটি ইমাম মুসলিম আরোপিত শর্তানুযায়ী সহীহ্। যাহবীও তাই বলেছেনঃ (১ম খন্ড, ৪০৫-৪০৬ পৃ.)] হায় হায়, আরবদের জন্যে মহাসংকট! উষ্ট্রের একটি কাফেলা বোঝাই খাদ্য আমার কাছে পাঠাও। তা যেন এত দীর্ঘ হয় যে, তার প্রথমটি আমার কাছে পৌঁছবে যখন, তখন কাতারের শেষ উটটি থাকবে তোমার কাছে। কাপড়ের বস্তায় ছাতু বহন করবে। তা পৌঁছার পর পযরত উমত আরবদের মধ্যে স্বীয় বিবেচনা অনুযায়ী বণ্টন করতে শুরু করলেন। এ কাজের জন্যে কয়েক ব্যক্তিকে তিনি দায়িত্বশীল বানিয়েছিলেন। তাদেরকে তিনি উটের গলার কাছে উপস্থিত থাকতে আদেশ করতেন এবং বলতেন ‘আরবরা উট ভালোবাসবে। আমি ভয় করছি তারা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। অতএব তা যবেহ করা বাঞ্ছনীয় এবং তার গোশত্ ও চর্বি মাখা দরকার এবং যে বস্তায় ছাতু এসেছে তা দিয়ে জোব্বা বানিয়ে পরা আবশ্যক।’
বস্তুত কঠিন দুর্ভিক্ষ ও ব্যাপক অভাব অনটনকালে মুসলিম সমাজ পরস্পরের পরিপোষণ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধানের জন্যে কাজ করে। একজনের এক অঞ্চলের অভাব অপরজন ও অপর অঞ্চল পূরণ করে দিতে এগিয়ে আসে।
পরবর্তী কথাও এরই সমর্থক ও পরিপূরক।
প্রথম যে শহর বা অঞ্চল বিশাল ইসলামী রাষ্ট্রের অধীন হওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নয় এবং সমগ্র প্রশাসন হতে যে প্রশাসনিক অঞ্চল সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন নয়, বরং কেন্দ্রীয় সরকারে সূত্রেও সমগ্র মুসলিমের সাথে সম্পর্কযুক্ত- যেমন অংশ ‘সমগ্র’- এর সাথে সংযুক্ত থাকে, ব্যক্তি পরিবার সংস্থার সাথে জড়িত থাকে, অংগগুলো গোটা দেহের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। এই একত্ব পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ততা ও একে অপরের দায়িত্বশীলতার শিক্ষাই দেয় ইসলাম এবং তা ফরয করে। কোন অঞ্চল বা শহরকে অন্যান্য ইসলামী দেশসমূহ থেকে- ইসলামের কেন্দ্রীয় রাজধানী থেকে স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন মনে করা যায় না। অতএব দুর্ভিক্ষ, আগুনে জ্বলা বা মাহামারী প্রভৃতি ধরনের কোন বিপদ যদি কোথাও এসে পড়ে, তাহলে সেখানকার জনগণ সাহায্য ও সহযোগিতা পাওয়ার বেশী অধিকারী। যাকাত সংগ্রহের স্থানের লোকদের অপেক্ষা ওদের সাহায্য দান অধিক প্রয়োজনীয়।
দ্বিতীয়, যাকাতের অনেক ব্যয়-ক্ষেত্রে রয়েছে। যেমন ইসলামের দিকে লোকদের মন আকৃষ্ট করার ও ইসলামী রাষ্ট্রের সমর্থক বানানোর জন্যে অর্থ ব্যয় করা, সাবীলিল্লাহ্- আল্লাহ্র পথে ব্যয় পর্যায়ে জিহাদ এবং যেসব কাজ ইসলামের পক্ষে আসে, ইসলামের কালেমা বুলন্দ হয়, তার সাহায্য করাও বিশেষভাবে গণ্য হয় আর এ ধরনের সব কাজই রাষ্ট্রপ্রধানের করণীয়, আধুনিক পরিভাষায় বলতে হয়, কেন্দ্রীয় ‘জিহাদ’ পর্যায়ে পরিচালিত করা হয়, তাও তো ব্যক্তির করণীয় হতে পারে না, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানেরও করণীয় ব্যাপারি নয়।বরং তাও সর্বতোভাবে সর্বোচ্চ সরকারের দায়িত্ব।
এ আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হল যে, কেন্দ্রয়ী সরকারের একটা নিজস্ব আায়ের উৎস থাকা আবশ্যক, যেখান থেকে সেসব কাজে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে, যা সামগ্রিক দৃষ্টিতে ইসলামের কল্যাণ ও মুসলিম জনগণের পক্ষে পরম উপকারী বিবেচিত হবে। অবশ্য তার কাছে যদি এমন সব আয়ের উপায় থাকে, যার দরুন যাকাতের মুখাপিক্ষিতা থাকবে না, তাহলে সে তো ভালই; খুবই উত্তম কথা। অন্যথায় রাষ্ট্রপ্রধানের এ অধিকার থাকতে হবে যে, সে বিভিন্ন অঞ্চল বা প্রদেশ থেকে যাকাতের টাকা নিয়ে নেবে যদ্দারা এ গুরুতর কাজগুলো করা হবে। এ কারণে ইমাম কুরতুবী এ সম্পর্কে কোন আলিমের মত উল্লেখ করেছেন। তা হচ্ছে- ফকীর ও মিসকীনদের জন্যে যাকাতের যে অংশ তা স্থানীয়ভাবে বণ্টন করতে হবে এবং অবশিষ্ট অংশ রাষ্ট্রপ্রধানের ইজতিহাদ অনুযায়ী ব্যয় করার জন্যে কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হবে। [আরবী*************] এসব হচ্ছে ইজতিহাদী বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত আর তাতে উপদেষ্টা পরিষদের লোকদের পরামর্শ শামিল হওয়া আবশ্যক। খুলাফায়ে রাশেদুর ঠিক এভাবেই কাজ করতেন। এই কারণে কোন স্থির ও অনড় নীতি নির্ধারণের কাছে নীতি স্বীকার করা যাবে না এবং প্রতি বছরের জন্যে বাধ্যতামূলকভাবে কোন অভিন্ন নীতি ধরে রাখা যেতে পারে না।
উমর ইবনে আবদুল আজীজ থেকে যা আমাদের পর্যন্ত বর্ণিত হয়ে এসেছে, তা-ও এ কথারই ব্যাখ্যা দেয়। তিনি তাঁর কর্মচারীদের লিখে পাঠিয়েছিলেন, “তোমরা অর্ধেক পরিমাণ যাকাত- আবূ উবাইদ বলেছেন- যথাস্থানে স্থাপন কর এবং অপর অর্ধেক আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।” পরবর্তী বছর আবার লিখে পাঠলেনঃ ‘সব’ যাকাতই যথাস্থানে ব্যয় কর।[আরবী*************] ‘রায়’ থেকে কুফা পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যাওয়া যাকাত তিনি পনর্বার ‘রায়’ তে ফেরত পাঠিয়েছিলেন, তা আমরা পূর্বে উল্লেখ করে এসেছি।
আমার মনে হয়, এ ব্যাপারে কোন মতদ্বৈততা বা বৈপরীত্য নেই। সামগ্রিক কল্যাণ ও প্রয়োজনের দৃষ্টিতেই তিনি এ কাজ করেছিলেন।
এজন্যে ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন, নামায কসর পরিমাণ দূরত্বের যাকাত স্থানান্তরিতকরণ সম্পূর্ণ ও নিশ্চিতরূপে নিষিদ্ধ হওয়ার কোন শরীয়াতী দলিল নেই। তাই শরীয়াতী কল্যাণ দৃষ্টিতে যাকাতও তদনুরূপ অন্যান্য জিনিস স্থানান্তারিত করা সম্পূর্ণ জায়েয। [আরবী*************] তৃতীয় প্রসিদ্ধ ও প্রত্যয়ে পরিণত কথা হচ্ছে, নবী (স) আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে মদীনায় যাকাত আনিয়ে নিতেন এবং মদীনায় মহাজির ও আনসারদের মধ্যে তা বণ্টন করে দিতেন।
নাসায়ী আবদুল্লাহ্ ইবনে হিলাল সাকাফী বর্ণিত হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেছেন, “এক ব্যক্তি রাসূলে করীম (স)- এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেঃ আমি যাকাতের ছাগী বা ছাগলের বিনিময়ে নিহত হওয়ার অবস্থায় পড়েছিলাম। তখন নবী করীম (স) বললেনঃ যদি তাড মুহাজির দরিদ্রদের দেয়া না হত তাহলে আমি তা গ্রহণ করতাম না।”
অনুরূপ পারিবারিক বোঝা বহন প্রসঙ্গে কুবাইচা ইবনুল মুযারিক (রা)- কে বলে নবী করীমের কথাঃ অপেক্ষা কর যতক্ষণ না আমাদের কাছে যাকাতের মাল এসে যায়, তখন হয় আমরা এ ব্যপারে তোমায় সাহয্য করব নতুবা এ বোঝা তোমার ওপর থেকে আমরা তুলে নেব। লোকটি ছিল নজদের অধিবাসী। তাকে হিজাজ থেকে সংগৃহীত যাকাত থেকে দেয়ার কথা রাসূলে করীম (স) চিন্তা করছিলেন এবং তা নজ্দ্বাসীদের কাছ থেকে হিজাজবাসীদের কাছে বহন করে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছিলেন।[ও] আদী ইবনে হাতেম (রা) তাঁর গোত্রের যাকাত নবী করীম (স)- এর পর হযরত আবূ বকর (রা)- এর কাছে বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন। চারদিকে মুর্তাদ হওয়ার হিড়িকের বছর সম্পর্কেও সেই কথাই সত্য।
হযরত উমর (রা) ইবনে আবূ যুবাবকে শুষ্কুতার পর দুর্ভিক্ষের বছর পাঠিয়েছিলেন তখন তিনি তাঁকে বলেছিলেনঃ লোকদের ওপর দুটি বার্ষিক যাকাত বাধ্যতামূলক করে দেবে এবং একবারেরটা সেখানকার লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দেবে এবং দ্বিতীয়বারেরটা আমার কাছে নিয়ে আসবে। [আরবী*************] মুয়াযের সেই কথাটিও এরূপ, যা তিনি ইয়েমেনবাসীদের বলেছিলেনঃ তোমরা আমার কাছে নিয়ে আস পাঁচ গজি কাপড় বা পোশাক। আমি তা যাকাতের স্থালে গ্রহণ করব। কেননা তা মদীনায় বসবাসকারী মুহাজিরদের জন্যে খুবই উপকারী ও সুবিধানজনক হবে। [ও] আবূ উবাইদ বলেছেন, এসব জিনিস তখনই স্থানন্তরিত হতে পারে যদি তা স্থানীয় লোকদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয় তাদের সচ্ছলতা লাভের পর উদ্ধ্ত্তৃ থাকে। উমর ও মুয়ায সংক্রান্ত বর্ণনা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। [ঐ] আমি বলব, স্থনীয় লোকদের নিরংকুশ ও চরম মাত্রায় সচ্ছল হতে হবে, তা আদৌ জরুরী ও বাধ্যতামূলক নয়। সচ্ছলতারও স্তরভেদ রয়েছে। তার কোনটি অপরটি থেকে নিম্মে এবং কোনটি অপরটির তুলনায় উচ্চে।
প্রয়োজনও অভিন্ন নয়। তাই কার প্রয়োজন অধিক তীব্র, তা দেখা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব এবং অবিলম্বে তাকে সাহায্য পৌঁছিয়ে দেয়া কর্তাব্য। যার অবস্থা একটা সময় পর্যন্ত বিলম্ব সইতে পারবে ও ধৈর্য ধারণ সম্ভব হবে, তাকে সাহায্য দেয়ায় বিলম্ব হলে কোন দোষ হবে না। কেননা দ্রুত কল্যাণ সাধনের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে কোথাও। কোথাও এমন মারাত্মক বিপদ দেখা দিতে পারে যে, তা বিলম্ব সহ্য করতে পারে না, সেখানে খুব দ্রুত সাহায্য পৌঁছাতে হবে।
তবে যাকাতের সবটাই স্থানান্তরিত না করে তার একটা অংশ পাঠিয়ে দেয়া বাঞ্ছনীয়। সমস্তটা স্থানান্তরিত করা যাবে কেবলমাত্র তখন, যখন সে স্থানের লোকেরা পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় সচ্ছলতা পেয়ে যাবে। উমর ও মুয়ায (রা) সংক্রান্ত খবরে একথা বলা হয়েছে।
অবশ্য একটি সতর্কতামূলক কথা বলা দরকার।শাফেয়ী মাযহাব যাকাত স্থানান্তরিত করার ব্যাপারে সব কয়টি মাযহাবের মধ্যে সর্বাধিক কড়াকড়ি ও কঠোরতা করার পক্ষপাতী হলেও তাঁর এ কাড়াকড়ি হ্রাস করেন যদি যাকাতের মালেক নিজেই তা বণ্টন করে। আসলে রাষ্ট্রপ্রধান ও যাকাত সংগ্রহের কর্মচারী- উভয়েল পক্ষেই যাকাত স্থানান্তরিত করা জায়েয, এটাই সহীহ্ কথা।
শাফেয়ী মতের ‘আলী মুহায্যাব’ গ্রন্থের লেখক বলেছেনঃ রাষ্ট্রপ্রধান যাকাত কর্মচারীকে যাকাত বণ্টনের অনুমতি দিলে সে তা বণ্টন করবে। আর বণ্টন করার অনুমতি না দিয়ে থাকলে সে তা বহন করে তার কাছে নিয়ে যাবে। [আরবী*************] ইমাম নববী তাঁর ‘শরাহ্’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ
জেনে রাখ, উপরিউক্ত বক্তব্য দাবি করে যে, যাকাত স্থানান্তরিত করার অধিকার রাষ্ট্রপ্রধান ও যাকাত কর্মচারীর নিশ্চিতভাবে রায়েছে। আর যাকাত স্থানান্তরিতকরণে যে প্রসিদ্ধ মতভেদ রয়েছে, তা হচ্ছে বিশেষভাবে মালের মালিকের নিজের স্থানান্তরিত করা পর্যায়ে। রাফেয়ী এ কথাটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বলেছেনঃ
এই যে কথটিকে তিনি অগ্রধিকার দিয়েছেন, হাদীসসমূহের দৃষ্টিতেও তাই অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। [ঐ- ১৭৫ পৃ.] বিশেষ প্রয়োজন ও কল্যাণদৃষ্টিতে ব্যক্তিদের যাকাত স্থানান্তরিতকরণ
রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে গণনরাযোগ্য ইসলামী কল্যাণ দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করে এক স্থান থেকে অন্যত্র যাকাত নিয়ে যাওয়া যখন জায়েয, যে মুসলিম ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরয ধার্য হয়েছে, কোন প্রয়োজন ও গ্রহণযোগ্য কল্যাণ বিচারে যাকাত স্থানান্তরিত করা তার পক্ষেও জায়েয হবে। অবশ্য যদি সে নিজেই স্বীয় ধনমালের যাকাত বণ্টনের দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হয়ে আসে। উপরিউক্ত দীর্ঘ আলোচনার তাই ফলশ্রুতি।
হানাফীরা স্থানান্তরকরণ পর্যায়ে যেসব দিক বিবেচনার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন, সেগুলোও লক্ষণীয়। যেমন নিকটাত্মীয় অভাবগ্রস্তদের কাছে নিয়ে যাওয়া, অধিক অনশন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির জন্যে বহন করে নেয়া, মুসলমানদের জন্যে অধিক কল্যাণকামী ও সাহায্য পাওয়ার বেশী অধিকারী ব্যক্তির কাছে নিয়ে যাওয়া অথবা অপর স্থানে কোন ইসলামী পিরকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া- যার ফলে মুসলিম জনগণের পক্ষে বিপুল ও বিরাট কল্যাণ সাধিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে- যাকাত যেঙ স্থানে থেকে সংগৃহীত সেখানে অনুরূপ কোন পরিকল্পনা না পাওয়া গেলে-ইত্যাদি ধরনের কার্যক্রম ও কল্যাণকর পদক্ষেপ- তাৎপরতা, যা দ্বীনপন্থী মুসলমানদের হৃদয়কে আশ্বস্ত করতে পারবে, সেই সাথে আল্লাহ্রও সন্তুষ্টি অর্জিত হবে- তা সম্পূর্ণ জায়েয, তাতে কোনই সন্দেহ নেই।

আরো পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button